Business is booming.

ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে কেন কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি মেডিক্যাল কলেজ নেই

মোহাম্মদ আমান উল্লাহ আমান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাংলাদেশের একটি অন্যতম জেলা। ৯টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত এই জেলাটির আয়তন ১৯২৭.১১ বর্গ কিলোমিটার। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুসারে এ জেলার জনসংখ্যা ৩৩,০৬,৫৫৯। শিল্প-সংস্কৃতি, শিক্ষা-সাহিত্যে দেশের অন্যতম অগ্রণী জনপদ এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, ব্যারিস্টার এ রসুল, নবাব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা, কথা সাহিত্যিক অদ্বৈত মল্ল বর্মণ, কবি আবদুল কাদির, কবি আল মাহমুদ, কবি ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জয়দুল হোসেন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ বহু জ্ঞানী গুণীর জন্মধন্য জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। জাতীয় অর্থনীতিতেও ব্যাপক অবদান রাখছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। তিতাস গ্যাস ফিল্ড, সালদা গ্যাস ফিল্ড, মেঘনা গ্যাস ফিল্ড দেশের এক-তৃতীয়াংশ গ্যাসের যোগান দেয়। আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের ২য় বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।  আশুগঞ্জ সার কারখানা দেশের ইউরিয়া সারের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প কারখানা। রেলখাত থেকে রাষ্ট্র যে রাজস্ব পায় তার একটি বড় অংশ আসে এই জেলা থেকে। এই জেলার প্রচুর বাসিন্দা বিদেশে থেকে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর জন্য রেমিট্যান্স যুদ্ধে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শিল্প সংস্কৃতির ধারক ও বাহক এবং দলমত নির্বিশেষে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল মিলন মেলা হিসেবে এ দেশের মানচিত্রে বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে এই জেলার বাসিন্দাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগের ইতিহাস নিঃসন্দেহে গর্ব করার মত ইতিহাস।

বাংলাদেশের ইতিহাস, শিল্প-সংস্কৃতি, শিক্ষা-সাহিত্য ও অর্থনীতিতে যে জেলার বাসিন্দাদের এত অবদান সে জেলা কেন আজ রাষ্ট্রের উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না? এ জেলায় কেন কোন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় নেই? কেন কোন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ নেই? কেন কোন ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট নেই? কেন কোন শিল্পাঞ্চল নেই? এ জেলার নদীগুলো মরে যাচ্ছে। কেন এগুলোকে প্রাণবন্ত করার কোন উদ্যোগ নেই? কৃষি প্রধান এই অঞ্চলটিতে কেন কৃষির আধুনিকায়নের কোন উদ্যোগ নেই?

স্বাধীনতার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশে পাশের জেলাগুলোর যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ^বিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, গবেষণা কেন্দ্র, শিল্পাঞ্চল ইত্যাদি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে কিছুই হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জেলায় জেলায় বিশ^বিদ্যালয় করার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় কোন কিছুই নেই। এখানকার মানুষ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেনা। স্বাধীনতার এই ৫২ বছরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বিজ্ঞানে, গবেষণায় ও শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬ জন সাংসদ রয়েছেন যাদের মধ্যে একজন পূর্ণ মন্ত্রী। অতীতেও এ জেলার সাংসদগণ মন্ত্রীপরিষদে জায়গা পেয়েছেন। অঞ্চলিক উন্নয়নে তাদের অবদান রয়েছে। তারা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তাদের নির্বচনী এলাকায় কাজ করেছেন। কিন্তু জেলার বৃহৎ উন্নয়ন উপেক্ষিত রয়েই গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে সব জেলাকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন বিকেন্দ্রীকরণের উপর জোর দিয়েছেন, সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পিছিয়ে থাকবে কেন? এখানকার সাংসদরা কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন বিকেন্দ্রীকরণের মডেল বাস্তবায়নে সম্মিলিত হয়ে কাজ করছেন না? জেলার বাসিন্দাদের মধ্যেও এ বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া নেই কেন?

রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে এ জেলার বাসিন্দারা রয়েছেন। কেউ দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই এগিয়ে আসা উচিত। মিলে মিশে আধুনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া গড়ে তোলার জন্য কাজ করা সকলের দায়িত্ব। সবার বোধোদয় হওয়া উচিত যে কালভৈরব দিয়ে এ জেলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ করা সম্ভব নয়। তিতাস নদীও শুকিয়ে গেছে। এখানকার অর্থনীতিতে এখানকার তিতাস গ্যাসের অবদান অতি সামান্য। অন্যত্র ব্যবহৃত হচ্ছে এই গ্যাস। রাষ্ট্রের উন্নয়নে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যথেষ্ট অবদান আছে। সুতরাং রাষ্ট্র থেকেও এ জেলাবাসীর কিছু পাওয়ার আছে। একটি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়, একটি মেডিক্যাল কলেজ ও একটি শিল্পাঞ্চল এ জেলায় স্থাপন করা শুধু সময়ের দাবী ছাড়া আর কিছুই নয়। বিষয়টি সবার অনুধাবন করা প্রয়োজন।

 

লেখকঃ অর্থনীতিবিদ ও গবেষক

চেয়ারম্যান, এন্টারপ্রাইজ ৩৬০ লিমিটেড ও স্কুল অব অন্ট্রুপ্রেনিউরশীপ ডেভেলপমেন্ট।

মতামত দিন