Business is booming.

হিরো আলম: আসল ঝামেলাটা কি গান না শ্রেণি?

সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলে হইতো হিরো আলমকে নিয়ে এতো সব যে ঘটছে তার কিছুই ঘটতো না। হইতো কেউ জানতোও না তার কথা। বড় জোর মফস্বল পর্যায়ের হাস্য-রস উদ্রেককারী একজন মানুষ হিসেবেই থাকতেন তিনি। কিন্তু পাল্টে গেছে দুনিয়া, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে। এতেই হিরো আলম জাতীয় পর্যায়ের একজন ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।

কেউ তাকে নিয়ে হাসে। কিন্তু অনেকেই আবার তাকে পছন্দ করে, বিশেষ করে তার ফলোয়াররা। তারা আমার-আপনার মতো সুশীল ভদ্রলোক না, তাদের  বলা যায় নিম্ন পদস্থ মানুষ। তাদের কোনোদিনই আমাদের সাথে দেখা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু গণযোগাযোগ মাধ্যম এমনি বাস্তবতা, (আমরা না চাইলেও) আমাদের ঘরে অনেক মেহমান এনে দেয়।

যেমন- হিরো আলম। আমি অনেক কিছুই সহ্য করি এসবের মধ্যে এটাও একটা। কিন্তু ডিবি পুলিশের কাছে অভিযোগ দেই না। তবে কয়েকজন দিয়েছেন। তাই রবীন্দ্র-নজরুলের গান গাইবেন না- এই মর্মে তার (আলম) কাছ থেকে মুচলেকা নিয়েছে পুলিশ।

সবই ঠিক ছিল। তবে এখানেও এসে দাঁড়ায় সোশ্যাল মিডিয়া। একজন  গায়ককে  পুলিশ দিয়ে শাসানো অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীর পছন্দ হয়নি। বিশেষ করে পুলিশ দিয়ে গান বন্ধ করা। আর এতেই শুরু হলো গালি বর্ষণ, ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ, তিরস্কার। যারা তাকে মুচলেকা দিয়ে অপমানিত করে মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিল তাদের চেষ্টার ফল হলো উল্টো। হিরো আলম বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনীতিবিদ ও সংস্কৃতি-কর্মীর চেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয়। এখন তিনি প্রতিবাদের প্রতীক। তার রবীন্দ্র-নজরুল দরকার নেই। আজ হিরো আলম একাই যথেষ্ট।

যারা তাকে ঝামেলায় ফেললো শোনা যাচ্ছে তারা শিল্প সংগীতের মানুষ। আবার তাদের মধ্যে টেলিফোনে এক নারীকে হেনস্তার অভিযোগে পদ হারানো সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদও রয়েছেন। তার একাধিক ভিডিও আছে যেখানে তিনি বলেন, ‘কী করে সাহস হয় এই লোকের আমার সামনে গান গাইবার? যখন তার কোনো সংগীত জ্ঞান নাই। আল্লাহ যে একখান গলা ও চেহারা দিয়েছে তাকে। তার গান নিচু শ্রেণির মানুষেরা শোনে। সে তাদের জন্য গাক। কিন্তু গুলশানে এসে গাইবে কেন?’

অতএব শ্রেণির বিষয়টা পরিষ্কার। ওপর তলা চায় না নিচের শ্রেণির মানুষ একই পরিসরে সংস্কৃতি চর্চা করুক। কিন্তু কপাল এমনি যে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে নিম্নদের কালচার তাদের ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ছে। এটা সহ্য না হবারই  কথা!

আরেকটা বিষয় হলো সোশ্যাল মিডিয়াতে কিন্তু প্রায় সকলেই হিরো আলমের পক্ষে লিখেছেন, কিছু মানুষ ছাড়া। অর্থাৎ ‘রাবীন্দ্রিক’ নাক উঁচু শুদ্ধবাদী সুশীলের চেয়ে বিপক্ষ সুশীলের সংখ্যা অনেক বেশি। এদের পুরনো রক্ষণশীলতা নেই। ‘রবি-রক্ষা’ প্রথম অগ্রাধিকার না। বরং তারা মনে করে যে ভাবে গাক করুক না কেন সবার জায়গা আছে।

আগে গান হতো মজলিশে। কিন্তু সে দিন শেষ। ডিজিটাল দুনিয়ায় সবার জায়গা হয়। অধিকাংশই এটা মেনে নেয়, কয়েকজন ছাড়া।

লেখক: আফসান চৌধুরী, সূত্র: ইউএনবি, (প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির অথবা জেনারেশনের নয়)

মতামত দিন